উত্তল এবং অবতল আয়না আলোচনা করার সময় আমরা প্রথমে উত্তল আয়না নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। লেন্সের বেলায় আমরা প্রথমে অবতল লেন্স নিয়ে আলোচনা করি। কারণ উত্তল আয়নায় যে ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হয় অবতল লেন্সে সেই একই ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হয়।
উত্তল আয়নার বেলায় আমরা দেখেছিলাম সেখানে সমান্তরাল আলো পড়লে সেটি প্রতিফলিত হবার সময় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবতল লেন্সের বেলাতেও ঠিক এই ধরনের ব্যাপার ঘটে। এই লেন্সে সমান্তরাল আলো পড়লে প্রতিসরিত হবার সময় সেটি ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিসরিত আলোগুলো যদি আমরা পেছনের দিকে বাড়িয়ে নিই তাহলে মনে হবে সেগুলো বুঝি একটি বিন্দু থেকে সোজা ছড়িয়ে পড়ছে। সেই বিন্দুটিকে বলে ফোকাস বিন্দু এবং লেন্সের কেন্দ্র থেকে এই ফোকাস পয়েন্টের দূরত্বটিকে বলে ফোকাস দূরত্ব।
উত্তল আয়নার বেলায় আমরা শুধু এক দিক থেকে আয়নার ওপর আলো ফেলতে পারতাম। লেন্সের বেলায় দুই দিক থেকেই আলো ফেলা যায়। প্রত্যেকটা লেন্সের একটা ফোকাস দূরত্ব থাকে। আলো যেদিক দিয়েই ফেলা হোক তার ফোকাস দূরত্ব সমান থাকে। সমান্তরাল আলো ফেলা হলে সেটি ছড়িয়ে পড়ে এবং মনে হয় সেটি বুঝি ফোকাস বিন্দু থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আলোক রশ্মির গতিপথ উল্টো করে দিলে এটি যেদিক দিয়ে এসেছে ঠিক সেদিক দিয়ে ফিরে যায়। তাই অবতল লেন্সের ছড়িয়ে যাওয়ার আলোর গতিপথ কোনোভাবে উল্টো করে দিতে পারলে সেটি সমান্তরাল হয়ে উল্টো দিকে বের হয়ে যাবে। (চিত্র 9.19)
অবতল লেন্সে কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি বোঝার জন্য আলোক রশ্মি অবতল লেন্সে কীভাবে প্রতিসরিত হয় সেটি জানতে হবে। সেটি নির্ভর করে আলোক রশ্মি কী কোণে অবতল লেন্সে এসে পড়ছে তার উপর। আমরা তিনটি বিশেষ আলোক রশ্মির প্রতিসরণের নিয়ম জানলেই কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারব :
(i) আলোক রশ্মি কেন্দ্রমুখী হলে সেটি প্রতিসরণের পর সোজাসুজি চলে যায়।
(11) প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মিটি প্রতিসরণের পর মনে হবে যেন রশ্মিটি ফোকাস বিন্দু থেকে আসছে।
(iii) আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তন করা হলে এটি যেদিক থেকে এসেছে ঠিক সেদিক দিয়ে ফিরে যায়। কাজেই কোনো আলোক রশ্মি ফোকাস অভিমুখী হলে সেটি প্রধান অক্ষের সাথে সমান্তরাল হয়ে প্রতিসরিত হবে।
আমরা এখন ইচ্ছে করলে অবতল লেন্সে একটা বস্তুর প্রতিবিম্ব কেমন হবে সেটা বের করতে পারি। ধরা যাক একটা বস্তু XY একটা অবতল লেন্সের কাছে রাখা হয়েছে। (চিত্র 9.20) বিশ্লেষণটি সহজ করার জন্য ধরে নিয়েছি বস্তুটির Y বিন্দুটি লেন্সের মূল অক্ষ YR এর উপরে। বস্তুটির কোন বিন্দুর প্রতিবিম্বটি কোথায় হবে সেটি বের করার জন্য সেই বিন্দু থেকে অন্তত দুটি রশ্মি আঁকা দরকার।
চিত্র 9.20: অবতল লেন্সে একটি বস্তুকে ছোট দেখায়।
Y বিন্দু থেকে দুটি রশ্মি না এঁকেও আমরা প্রতিবিম্বটি বের করতে পারব। Y বিন্দু থেকে YR অক্ষ বরাবর একটি রশ্মি আঁকা সম্ভব, তাই আমরা জানি Y বিন্দুটির প্রতিবিম্ব এই অক্ষের ওপর তৈরি হবে। X বিদুটির প্রতিবিম্ব থেকে অক্ষের ওপর লম্বটি এঁকে নিলেই আমরা Y বিন্দুর প্রতিবিম্ব পেরে যাব।
X বিন্দু থেকে দুটি রশ্মি কল্পনা করি, একটি অক্ষের সাথে সমান্তরাল XP সেটি লেন্স থেকে বের হওয়ার সময় ছড়িয়ে যাবে এবং যেহেতু মনে হবে ফোকাস থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে তাই ফোকাস F থেকে P পর্যন্ত একটি রেখা টেনে বর্ধিত করলেই সেই রশ্মিটি পেয়ে যাব। দ্বিতীয় রশ্মিটি x বিন্দু থেকে লেন্সের কেন্দ্রের দিকে এঁকে নিই। পাতলা লেন্সের নিয়ম অনুযায়ী এটি সরাসরি XT দিকে বের হয়ে যাবে। XT এবং PS রেখা দুটি যে বিন্দুতে ছেদ করবে সেটিই হচ্ছে X এর প্রতিবিম্ব X, X' থেকে অক্ষের ওপর লম্ব আঁকলে আমরা XY এর প্রতিবিম্ব X'Y' পেয়ে যাব।
উত্তল আয়নার বেলায় আমরা যা দেখেছিলাম অবতল লেন্সের প্রতিবিম্বের বেলাতেও সেটি সত্যি
(a) এটার অবস্থান হবে লেন্সের কেন্দ্র এবং ফোকাস বিন্দুর মাঝখানে
(b) এটা অবাস্তব
(c) এটা সোজা এবং এটা
(d) ছোট।
আরও দেখুন...